বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জাকাত বণ্টনের খাতসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   140 বার পঠিত

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জাকাত বণ্টনের খাতসমূহ

জাকাত হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে গরিব-দুস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে জাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ এবং জাকাত শুধু শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরজ বা আবশ্যিক হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে ‘জাকাত’ শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার জাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন করার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কারণে আল্লাহপাক নিজেই জাকাত ব্যয় বণ্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে- জাকাত কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আল কোরআন, ৯:৬০)

পবিত্র কুরআনে জাকাত আদায়ের ৮টি খাতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা হলো :
প্রথম খাত : ফকির, ফকির হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকির। যেসব স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সংগত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকির। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকির।

দ্বিতীয় খাত : মিসকিন- মিসকিন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যেসব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকিন। মিসকিন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে জাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকির বা মিসকিন যাকেই জাকাত দেওয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।

তৃতীয় খাত : আমেলীন- ইসলামি সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে জাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বণ্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক জাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কোরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত জাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকিন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত দূরীকরণে জাকাত আদায় শর্ত।

চতুর্থ খাত : মুআলস্নাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য) নতুন মুসলিম যার ইমান এখনও পরিপক্ব হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিতকরণ আবশ্যকীয় মনে করে জাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ইমান পরিপক্ব হয়। এ খাতের আওতায় দুস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের জাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহগণ অভিমত প্রদান করেছেন।

পঞ্চম খাত : ক্রীতদাস/বন্দি মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দি মুক্তির জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোনো নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দি হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

ষষ্ঠ খাত : ঋণগ্রস্ত- এ ধরনের ব্যক্তিকে তার ঋণমুক্তির জন্য জাকাত দেওয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্তের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোনো ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না- জায়েয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির

জন্য ব্যয় না করে।

সপ্তম খাত : আল্লাহর পথে- সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরিব দ্বিনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে জাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়া ইসলামের মাহাত্ম্য ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বিনি শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও জাকাত দেওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে যে, ‘জাকাত এই সমস্ত লোকের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘোরাফেরা করতে পারে না, যাচ্ঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত বলে মনে করে।’

অষ্টম খাত : অসহায় মুসাফির- যে সমস্ত মুসাফির অর্থকষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হওয়ার মতো এবং বাড়ি ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ জাকাত থেকে প্রদান করা যায়।

এসব খাতের বাইরে অন্য কোনো খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

Facebook Comments Box

Posted ৩:০৬ পিএম | রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।